• রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
বাঘায় সড়ক দুর্ঘটনায় বিএনপির এক নেতা নিহত নওগাঁর আত্রাইয়ে আয়েশা মসজিদের ভিত্তপ্রস্তর স্থাপন শেরপুরের শ্রীবরদীতে জামায়াতে ইসলামী’র ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত সাংবাদিক নেতার বিরুদ্ধে ভিন্ন কৌশলে অপপ্রচার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন, মামলার প্রস্তুতি বাগেরহাটে প্রতিবন্ধী তরুণী লাঞ্ছনার ঘটনায় দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন নওগাঁয় গরু বোঝাই ভটভটি উল্টে দুই ব্যবসায়ী নিহত,আহত-৫ ইসলামপুরে আলহাজ্ব শওকত হাসান মিঞা উন্নয়ন কমিটির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত সিংড়ায় বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার ইউসুফের উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত রাজশাহী-৬(চারঘাট-বাঘা) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী মিঠুর পক্ষে ৩১ দফা রূপরেখার লিফলেট বিতরণ বাঘায় ইউএনও কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৫, ৩-১ গোলে পাকুড়িয়া ফুটবল একাদশের জয়

” সকলের জন্য শিক্ষা: বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ”

দিনকাল বিডি ২৪ / ২৪৭ Time View
প্রকাশঃ সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আত্রাই-রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : ভূমিকা: প্রাথমিক শিক্ষা একজন শিশুর শিক্ষা জীবনের ভিত্তি রচনার প্রথম ধাপ। এটি শুধু পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান নয়, বরং নৈতিকতা, সামাজিকতা ও জীবনের মৌলিক দক্ষতাগুলো শেখার সূচনা। একটি দেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামগ্রিক জাতীয় অগ্রগতির জন্য প্রাথমিক শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশ সরকার “সবার জন্য শিক্ষা” স্লোগানকে সামনে রেখে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও বিনামূল্যে প্রদান করছে।
শিক্ষা হলো মৌলিক মানবাধিকার এবং টেকসই উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকেই শিক্ষার প্রসার ও সমতাভিত্তিক সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষাকে সার্বজনীন করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক কারণে এখনও অনেক শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই নিবন্ধে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা (Inclusive Education)-এর ধারণা, বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা কী?
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা বলতে বোঝায় সকল শিশু, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত, প্রতিবন্ধী, আদিবাসী, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সন্তানদের জন্য সমানভাবে শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা। এটি শুধু শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের অধিকারই নয়, বরং প্রতিটি শিশুর জন্য উপযুক্ত শিখন পরিবেশ তৈরি করাকে নির্দেশ করে।
বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ:
১. সরকারি নীতি ও আইনি কাঠামো :
• শিক্ষা নীতি ২০১০: এই নীতিতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, আদিবাসী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
• প্রাথমিক শিক্ষা (বাধ্যতামূলক) আইন, ১৯৯০: সকল শিশুর জন্য বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই আইন প্রণয়ন করা হয়।
• জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপকল্প ২০২১: এতে বহুভাষিক শিক্ষা ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত শিখন উপকরণের কথা বলা হয়েছে।
২. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা:
• সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম (IE): প্রায় ১৩,০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য সমন্বিত শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
• ব্রেইল বই ও সহায়ক প্রযুক্তি: দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল বই এবং শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৩. আদিবাসী ও বহুভাষিক শিক্ষা:
• মাতৃভাষায় শিক্ষা: চাকমা, মারমা, গারো, সাঁওতালসহ বিভিন্ন আদিবাসী শিশুদের জন্য তাদের মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
• বহুভাষিক শিক্ষা উপকরণ: UNICEF-এর সহায়তায় আদিবাসী অঞ্চলের স্কুলগুলোতে স্থানীয় ভাষায় বই ও গাইড তৈরি করা হয়েছে।
৪. দরিদ্র ও প্রান্তিক শিশুদের জন্য সহায়তা:
• বিনামূল্যে বই বিতরণ: প্রতি বছর প্রাথমিক স্তরের সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হয়।
• স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম: দরিদ্র অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের জন্য মিড-ডে মিল চালু করা হয়েছে, যা ঝরে পড়ার হার কমাতে সাহায্য করছে।
• স্টিপেন্ড ও উপবৃত্তি: বিশেষ করে মেয়েশিশু, প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য উপবৃত্তি দেওয়া হয়।
৫. ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি:
• ঘরে বসে শিক্ষা (Shikkha Batayon): কোভিড-১৯ মহামারীর সময় টেলিভিশন ও রেডিওর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছিল।
• মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইন ক্লাস: গ্রামীণ অঞ্চলে ডিজিটাল লার্নিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষা প্রসারে কাজ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার চ্যালেঞ্জসমূহ:
১.শিক্ষকের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব – অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা পরিচালনার জন্য শিক্ষকরা প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ থেকে অনেক সময় বঞ্চিত।
২. বৈষম্যমূলক মানসিকতা – প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র শিশুদের প্রতি অনেক সময় সমাজের বা বিদ্যালয়ের ভেতরে অবজ্ঞা লক্ষ্য করা যায়।
৩. বাজারকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা – শহর ও গ্রামের মধ্যে শিক্ষার মানে পার্থক্য তৈরি হওয়ায় প্রান্তিক শিশুরা পিছিয়ে পড়ছে।
৪. অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা – অনেক বিদ্যালয়ে এখনও প্রতিবন্ধী বান্ধব অবকাঠামো বা পর্যাপ্ত শিক্ষাসামগ্রী নেই।
ভবিষ্যৎ করণীয়:
১.সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।
২.শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও আদিবাসী শিশুদের পাঠদানে দক্ষ করে তুলতে হবে।
৩.সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে অভিভাবকদের মধ্যে শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে হবে।
৪.প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলে শিক্ষা পৌঁছে দিতে হবে।
উপসংহার:
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও এখনও অনেক শিশু শিক্ষার বাইরে রয়ে গেছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা শুধু একটি নীতিগত বিষয় নয়, এটি একটি সামাজিক দায়িত্ব। সরকার, বেসরকারি সংস্থা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে একটি সকলের জন্য শিক্ষা-ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG-4) অর্জনে বাংলাদেশকে এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
লেখক: বিজয় কুমার
সাবেক শিক্ষার্থী
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category